ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি | fi amanillah meaning bangla

- প্রকাশিত : ০৫:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
- / 36
মুসলিম হিসেবে আমরা সকলেই “ফি আমানিল্লাহ” এই বাক্যটির সাথে পরিচিত। কিন্তু অনেকেই ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? তা জানে না। এই পোস্টে ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? বা fi amanillah meaning bangla সহ, “ফি আমানিল্লাহ” কখন কোথায় বলতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি | fi amanillah meaning bangla
ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? এবং কখন ফি আমানিল্লাহ বলতে হয় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। মুসলিমদের উচিত জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান গুলো কে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। সেটা হোক ছোট থেকে বড় জীবনের যেকোনো কাজ।অর্থাৎ কিভাবে খেতে হয়? কিভাবে কথা বলতে হয়? কিভাবে মানুষের সাথে আচরণ করতে হয়? কিভাবে কাউকে বিদায় জানাতে হয়? এই সমস্ত বিষয়ে সম্পর্কে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
সেই সুনির্ধারিত নির্দেশনাগুলো যদি আমরা পালন করতে পারি তাহলে এটা আমাদের জন্য কল্যাণকর।ফিআমানিল্লাহ সাধারণত বিদায়ের প্রাক্কালে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিদায়ের প্রাক্কালে বলার জন্য হাদীসে বর্ণিত আরো অনেক দোয়া রয়েছে। ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? বা fi amanillah meaning bangla সহ অন্যান্য হাদীসগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
কখন “ফি আমানিল্লাহ” বলতে হয়?
“ফি আমানিল্লাহ” এই বাক্যটি মূলত আরবি ভাষার বাক্য। যেহেতু আমরা মুসলিম তাই জীবনে কখনো না কখনো “ফি আমানিল্লাহ” এই বাক্যটি শুনেছি বা বলেছি। কিন্তু এই বাক্যটি কোথায় বা কোন সময় বলতে হয় সেটা হয়তোবা অনেকেই জানিনা। চলুন ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? এবং এটি কখন বা কোন সময় বলতে হয় তা নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
“ফি আমানিল্লাহ” {في أمان الله} আরবী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে- ‘আল্লাহ নিরাপত্তা দান করুন’ বা ‘আল্লাহর নিরাপত্তায়’। মুসলমানেরা সাধারনত এই দোয়াটি বিদায়ের প্রাক্কালে বলে থাকে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হল, এই দোয়াটি হাদিস বর্ণিত দোয়া নয়, কিন্তু এই দোয়ার অর্থ যেহেতু ভালো তাই বিদায়ের প্রাক্কালে “ফি আমানিল্লাহ” বলা যেতে পারে।
ফি আমানিল্লাহ বলা কি বিদআত?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে “ফি আমানিল্লাহ” এই দোয়াটি করা কি বেদায়াত? এই এ প্রশ্নটির উত্তর হলোঃ এই দোয়াটি যেহেতু সুন্দর একটি দোয়া, এবং এই দোয়াটিতে অনৈসলামিক কোন বিষয় নেই, তাই অধিকাংশ আলেমগণের মতামত হল এই দলটিকে বিদআত হয়তো বলা উচিত নয়।
কিন্তু বিদায়ের প্রাক্কালে শুধুমাত্র এই দোয়াটি না পড়ে হাদিসে বর্ণিত যে দোয়া গুলো রয়েছে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করা উচিত।ঠিক তেমনি ভাবে যদি কোন ব্যক্তি কারো কাছে দোয়া চাইতে হলেও ফি আমানিল্লাহ বলা যেতে পারে। কেননা কারো জন্য কেউ দোয়া চাইলে তা কিভাবে করতে হবে এর জন্য ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যেহেতু “ফি আমানিল্লাহ” বাক্যটির অর্থ ভালো তাই এই দোয়াটি করা যেতেই পারে।
যথেষ্ট প্রমাণাদি ব্যতীত, কোন বিষয়কে বেদায়াত আখ্যা দেওয়া সমীচীন নয়। কোন অমল যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর জামানা এবং সাহাবীদের জমানায় না থাকে এবং সুনির্দিষ্টভাবে কোরআন এবং হাদিস বহির্ভূত হয় তাহলে সেটি বিদআত বলে গণ্য হবে।
বিদায়ের সময়ের অন্যান্য দোয়া: ১
বিদায়ের সময়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন একটি দোয়া হলো সালাম জানানো। কেননা সাক্ষাৎ হওয়ার সময় যেমনি ভাবে সালাম দেওয়া সুন্নত, ঠিক তেমনি ভাবে বিদায়ের সময় সালাম আদান-প্রদান করা সুন্নাত।
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি কোন মজলিসে যোগদান করবে তখন সালাম প্রদান করবে। এবং যদি সে সেখানে বসতে চায় তাহলে বসে পড়বে। তারপর যখন মজলিস ত্যাগ করবে তখনও সালাম প্রদান করবে। কারণ প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালামের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ উভয়ের সালাম সমান গুরুত্বপূর্ণ (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭০৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২০৮)
আরেকটি বর্ণনায় এভাবে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বললেন দশ নেকি।অপর আরেকজন ব্যক্তি সালাম ব্যতীতই মজলিস ত্যাগ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, সে মনে হয় ভুলে গেছে। যখন তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কোনো মজলিসে পৌঁছবে তখন উপস্থিত মজলিসে সালাম প্রদান করবে। যদি সে উক্ত মজলিসে বসতে চায় তাহলে বসবে। এরপর যখন মজলিস থেকে বিদায় নেবে তখনও সালাম দেবে। কেননা প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালামের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়।অর্থাৎ উভয় সালামের গুরুত্ব সমান।
বিদায়ের সময়ের অন্যান্য দোয়া: ২
কাযা’আ রহ. বলেন- আমাকে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেনঃ আমি তোমাকে ঠিক সেভাবেই বিদায় জানাচ্ছি যেভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায় জানিয়েছিলেন। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করলেন।
أَسْتَوْدِعُ اللّٰهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ
বাংলা উচ্চারণঃ আসতাউদি’উল্লাাহা দীনাকা ওয়া আমাানাতাকা ওয়া খাওয়াাতীমা ‘আমালিকা
অর্থ: আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং তোমার কর্মকান্ডের ফায়সালা মহান আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি।
বিদায়ের সময়ের অন্যান্য দোয়া: ৩
মূসা ইবনে ওয়ারদান রহ. বলেনঃ আমি কোন এক সময় সফরে বের হওয়ার পূর্বে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর নিকটে বিদায় নিতে গেলাম। তিনি বললেনঃ ওহে ভাতিজা, আমি কি তোমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দেব? যে দোয়াটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায়ের সময় বলতে শিখিয়েছিলেন? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি নিম্নে বর্ণিত দোয়াটি বললেন।(-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস ২৮২৫; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল-লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী, হাদীস ৫০৬, ৫০৮)
أَسْتَوْدِعُكُمُ اللّٰهَ الَّذِيْ لَا تَضِيْعُ وَدَائِعُهٗ
বাংলা উচ্চারণঃ আসতাউদি’উকুমুল্লাাহাল্লাযী লা তাদী’উ ওয়াদাই’উহু
অর্থ: আমি তোমাকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি এবং আমানত রাখছি। যার কাছে আমানত রাখা হলে তা কখনোই নষ্ট হয় না।
উপসংহার
ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি? আশাকরি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে জানতে পেরেছেন।সেই সাথে আরো বুঝতে পেরেছেন যে ফিআমানিল্লাহ এই দোয়াটির পাশাপাশি আরো অনেক দোয়া রয়েছে যেগুলো আমরা বিদায়ের সময় পড়তে পারি।
জীবনের ছোটখাট এই আমলগুলোকে ক্ষুদ্র মনে করা সমীচীন নয়। কেননা এর মাধ্যমেও আমরা অনেক বড় প্রতিদান পেতে পারি। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
যদি আপনার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি ভালো একটি কাজ শিখতে পারে। তাহলে এটা আপনার নিজের জন্য কল্যাণকর। তাই ভালো কাজে সহায়তা করা একজন মুসলিম ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য। আমরা নিজেরা ভালো কাজ করবো, এবং অন্যান্যদেরকে যারা ভালো কাজের দিকে ধাবিত নয়, তাদেরকে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করব।