আলকুশি বীজের উপকারিতা সমূহ জেনে নিন

Photo of author

By Nur Islam

আলকুশি বীজের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি নারী এবং পুরুষ উভয়ের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও আলকুশি বীজের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে আলকুশি বীজের উপকারিতা সমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

আলকুশি বীজের উপকারিতা

আলকুশি বীজের যে সকল উপকারিতা রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে। তাই যদি আপনি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়েন, তাহলে আলকুশি বীজের উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক, আলকুশি বীজের উপকারিতা সমূহ। 

  • শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে: আলকুশি বীজ শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। নারী কিংবা পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি সমানভাবে কার্যকর। বিশেষ করে libido বা যৌ*ন কামনা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আলকুশি বীজের উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেমিক্যাল যুক্ত অন্যান্য যৌ*ন উ*ত্তেজ*ক ঔষধের মত আলকুশি বীজের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। প্রাকৃতিক ভেষজ গুণসম্পন্ন এই ঔষধটি প্রাচীনকাল থেকেই libido বা যৌ*ন কামনা বৃদ্ধি করার কার্যকর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 
  • মন ভাল করতে সহায়তা করে: আলকুশি বীজে রয়েছে L-Dopa নামের এক ধরনের এনজাইম যা ডোপামিন তৈরি এবং নিঃসরণে সহায়তা করে। তাহলে নিয়মিত আলকুশি বীজ খেলে তা মুড ভালো রাখতে সহায়তা করে। 
  • নার্ভাস সিস্টেম মজবুত করে: শরীরের নার্ভাস সিস্টেম মজবুত করতে আলকুশি বীজের বিকল্প নেই। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে নার্ভাস সিস্টেম বৃদ্ধি করতে চান, সেক্ষেত্রে নিয়মিত আলকুশি নিজের পাউডার খেতে পারেন। 
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: আলকুশি বীজের উপকারিতা সমূহের মধ্য থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত আলকুশি বীজ খেলে তা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই যদি আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে আলকুশি বীজ খেতে পারেন। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আলকুশি বীজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।আপনি যদি নিয়মিত আলকুশি বীজের পাউডার খান, তাহলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। 
  • ইনসম্নিয়া দূর করে: আপনার যদি ইনসম্নিয়া বা ঘুম না হওয়া জনিত সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার জন্য আলকুশি বীজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত আলকুশি বীজের পাউডার খান তাহলে ধীরে ধীরে আপনার ইইনসম্নিয়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 
  • মাসিক ঋতুস্রাব নিয়মিত করে: নারীদের অনিয়মিত মাসিক ঋতুস্রাব নিয়মিত করার ক্ষেত্রে আলকুশি বীজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আলকুশি বীজ খেতে পারেন। 

আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা

আলকুশি বীজ খাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হল পাউডার করে খাওয়া। আলকুশি বীজ পাউডার করে রাখলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা ভালো থাকে। ইতোমধ্যেই উপরে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে আলকুশি পাউডার এর আরো বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  • সন্তান ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আলকুশি পাউডারের আরেকটি কার্যকর উপকারিতা হলো এটি নারীদের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটি বা সন্তান ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে আলকুশি পাউডার খেতে পারেন। আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন। 
  • সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর: যেকোনো ধরনের সংক্রমণ রোধে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা বেশ লক্ষণীয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে যদি আপনি সংক্রমণ দূর করতে চান, তাহলে আলকুশি পাউডার খেতে পারেন। 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: আলকুশি পাউডারে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই যদি আপনি নিয়মিত আলকুশি পাউডার খান, তাহলে তা আপনার শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণ করবেন। 
  • ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে: জয়েন্ট এর ব্যথা কিংবা সাধারণ যেকোনো ব্যথা দূর করতে আলকুশি পাউডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যদি আপনার শরীরের জয়েন্টে ব্যথা থাকে কিংবা অন্য কোন জায়গায় ব্যথা থাকে, তাহলে নিয়মিত কিছুদিন আলকুশি পাউডার খেতে পারেন। 
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও আলকুশি পাউডারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত আলকুশি পাউডার খেলে তা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
  • চুল পড়া রোধ করে: আপনার যদি অকালে চুল পড়ে যাওয়ার মত সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে আলকুশি বীজ আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলকুশি বীজের পাউডার অকালে চুল পড়া রোধে খুবই কার্যকর ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা থাকলে আরো কিছু বীজের পাউডার খেতে পারেন। 

আলকুশি গাছের ছবি

আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে কোন লাভ হবে না যদি না আপনি আলকুশি গাছ চিনতে পারেন। হয়তোবা এমনও হতে পারে যে আপনার আশেপাশেই আলকুশি গাছ রয়েছে কিন্তু আপনি তা চিনতে পারছেন না। যাইহোক, নিচে আলকুশি গাছের ছবি তুলে ধরা হলো। নিম্ন বর্ণিত আলকুশি গাছের ছবি দেখে খুব সহজেই আপনি আলকুশি গাছ চিনতে পারবেন।

আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম

আলকুশি বীজের উপকারিতা বহু গুণ বৃদ্ধি পায় যখন তা অশ্বগন্ধার সাথে মিশ্রিত করে খাওয়া হয়। কেননা আলকুশি বীজ যেমন উপকারী ঠিক তেমনি অশ্বগন্ধাও একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। আর দুই উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ যখন একত্রিত করে খাওয়া হয় তখন তা খুবই কার্যকর হয়ে থাকে। 

আলকুশি বীজের সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম হল আলকুশি বীজের পাউডার এবং সমপরিমাণ অশ্বগন্ধার পাউডার একত্রিত করে মিশ্রিত করতে হবে এর পরে তা দিনে একবার কিংবা দুইবার এক চা চামচ পরিমাণ পাউডার নিয়মিত খেতে হবে। এভাবে যদি আপনি বেশ কিছুদিন, খেতে পারেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা লাভ করতে পারবেন।

আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম

সঠিক নিয়মে যদি আপনি আলকুশি বীজের পাউডার না খান, সেক্ষেত্রে কিন্তু, উপকারিতা লাভ করতে পারবেন না। তাই আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলকুশি বীজ খাওয়ার সব থেকে উপযুক্ত সময় হলো রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া। 

এই দুই সময়ের যে কোন এক সময় যদি আপনি খান, তাহলে আলকুশি বীজের উপকারিতা যথাযথভাবে পেতে পারেন। অবশ্য চাইলে আপনি দিনের যে কোন সময় আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারবেন এতে কোন সমস্যা নেই। 

আলকুশি পাউডার এর দাম

প্রতি ১০০ গ্রাম আলকুশি পাউডার এর দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বাকালীর দোকানে সাধারণত আলকুশি পাউডার পাওয়া যেতে পারে। তবে বর্তমানে আপনি অনলাইন থেকেও আলকুশি পাউডার ক্রয় করতে পারবেন। অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যারা আলকুশি পাউডার হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকে।

আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা

আলকুশি বীজের বহুবিধ উপকারিতা থাকলেও এর বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি পাউডার খান সেক্ষেত্রে এর অপকারিতা সমূহ প্রকাশ পেতে পারে। অথবা আপনার যদি এলার্জি কিংবা অন্য কোন ধরনের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রেও আলকুশি পাউডার আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

আলকুশি পাউডার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলো নিচে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হবে। তো আসুন তাহলে দেখে নেই, আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা সমুহ।

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। 
  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
  • পেটে ব্যথা হওয়া।
  • ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া।
  • মাথাব্যথা হওয়া।

আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা

আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই যদি আপনি উপরে উল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। যাইহোক নিচে ছকের মাধ্যমে আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো।

আলকুশি বীজের উপকারিতাআলকুশি বীজের অপকারিতা
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া।
ওজন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ভূমিকা রাখে।মাথাব্যথা হওয়া।
সন্তান ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।ডায়রিয়া হওয়া।
চুল পড়া রোধ করে।ঘুম ঘুম ভাব বৃদ্ধি পাওয়া।
বার্ধক্যের ছাপ কমায়।মুখ শুকিয়ে যাওয়া।

আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আলকুশি বীজের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কিংবা দীর্ঘদিন আলকুশি বীজ খেলে যে সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ হলো: 

  • হার্টবিট বৃদ্ধি পাওয়া।
  • ডায়রিয়া হওয়া।
  • ঘুম ঘুম ভাব বৃদ্ধি পাওয়া।
  • গ্যাস জনিত সমস্যা দেখা দেয়া।
  • ত্বকে র‍্যাশ উঠা।

আলকুশি বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা

আলকুশি বীজ আপনি যেভাবেই খান না কেন, তা আপনার শরীরের জন্য উপকারী। তবে আলকুশি বীজের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে চাইলে অবশ্যই এটিকে চূর্ণ করে খাওয়া উচিত। আপনি যদি আলকুশি বীজ চূর্ণ করেন তাহলে এর ভেষজ গুণ সামান্য পরিমাণও কমে যায় না বরং এটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আলকুশি বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ নিম্নরূপ।

  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • বেশি শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ত্বক ভালো রাখে।
  • বার্ধক্যের ছাপ কমায়।
  • কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
  • কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
  • প্রাকৃতিক এন্টিভেনম হিসেবে কাজ করে।

Leave a Comment