ব্যাখ্যা সহ নিউটনের তিনটি সূত্র

নিউটনের তিনটি সূত্র বিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি। এই প্রবন্ধে আমরা নিউটনের তিনটি সূত্রের ব্যাখ্যা, উদাহরণ ও বিবৃতি বিশদভাবে আলোচনা করব।

নিউটনের তিনটি সূত্র

নিউটনের গতিসূত্র বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা গতি ও বলের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৮৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ Principia Mathematica তে এই সূত্রগুলো প্রকাশ করেন। নিউটনের তিনটি গতিসূত্র হলো:

  • প্রথম সূত্র (স্থিতিশীলতার সূত্র)
  • দ্বিতীয় সূত্র (গতির মূল সূত্র)
  • তৃতীয় সূত্র (ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সূত্র)

নিউটনের তিনটি সূত্র ব্যাখ্যা

যে নিউটনের তিনটি সূত্রের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। তাই যদি আপনি নিউটনের তিনটি সূত্রের ব্যাখ্যা জেনে নিতে চান সে নিম্নবর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন।

১. নিউটনের প্রথম সূত্র (স্থিতিশীলতার সূত্র)

বিবৃতি:
“কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে, সেটি স্থির থাকলে স্থির থাকবে এবং গতি করলে একই গতিতে চলতে থাকবে।”

ব্যাখ্যা:
এই সূত্রকে জড়তার সূত্রও বলা হয়। এটি বোঝায় যে, কোনো বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন তখনই হবে যখন বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হবে।

উদাহরণ:

  • চলন্ত বাস হঠাৎ থামলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
  • বল ছুঁড়ে দিলে সেটি বাতাসের ঘর্ষণ ও মাধ্যাকর্ষণের কারণে থেমে যায়।

২. নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র (গতির মূল সূত্র)

বিবৃতি:
“কোনো বস্তুর ভর এবং তার উপর কার্যকর বলের গুণফল বস্তুটির গতিবেগের পরিবর্তনের সমান।”

গাণিতিকভাবে, এই সূত্র প্রকাশ করা হয়—

 

F=maF = ma

যেখানে,


  • FF
     

    = বস্তুটির উপর কার্যকর বল (Newton)


  • mm
     

    = বস্তুটির ভর (kg)


  • aa
     

    = বস্তুটির ত্বরণ (m/s²)

ব্যাখ্যা:
কোনো বস্তুর উপর যত বেশি বল প্রয়োগ করা হবে, সেটি তত দ্রুত গতিশীল হবে। একইভাবে, ভারী বস্তুতে একই বল প্রয়োগ করলে তুলনামূলক কম গতি হবে।

উদাহরণ:

  • ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করলে সেটি দূরে চলে যায়।
  • ভারী গাড়ি ঠেলতে বেশি বল প্রয়োজন হয়, হালকা গাড়ির তুলনায়।

৩. নিউটনের তৃতীয় সূত্র (ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সূত্র)

বিবৃতি:
“প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।”

ব্যাখ্যা:
এই সূত্র বোঝায় যে যখন কোনো বস্তু অন্য বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন সেই বস্তুও সমান বল বিপরীত দিকে প্রয়োগ করে।

উদাহরণ:

  • বেলুনের মুখ খুলে দিলে বাতাস বেরিয়ে যায় এবং বেলুন উল্টো দিকে চলে যায়।
  • সাঁতার কাটার সময় পানি পিছনে ঠেলে দিলে শরীর সামনে এগিয়ে যায়।

নিউটনের তিনটি সূত্র কি কি

সূত্র বিবরণ উদাহরণ
প্রথম সূত্র বাহ্যিক বল না থাকলে বস্তু স্থির থাকবে বা একই গতিতে চলবে। চলন্ত বাস হঠাৎ থামলে যাত্রীরা সামনে ঝুঁকে পড়ে।
দ্বিতীয় সূত্র বল = ভর × ত্বরণ (F = ma) ভারী বস্তু ঠেলতে বেশি শক্তি লাগে।
তৃতীয় সূত্র প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতমুখী সমান প্রতিক্রিয়া থাকে। রকেট বাতাসে ধাক্কা দিয়ে উপরে উঠে যায়।

নিউটনের তিনটি সূত্র লেখ

নিচে নিউটনের তিনটি সূত্র সহজ ভাষায় লেখা হলো:

  • প্রথম সূত্র: বাহ্যিক বল ছাড়া বস্তু তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না।
  • দ্বিতীয় সূত্র: কোনো বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফল সেই বস্তুতে প্রয়োগ করা বলের সমান।
  • তৃতীয় সূত্র: প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।

নিউটনের তিনটি সূত্রের উদাহরণ

১. প্রথম সূত্রের উদাহরণ

  • স্থির বই টেবিলের উপর থাকবে যতক্ষণ না বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয়।
  • চলন্ত ট্রেন হঠাৎ থামলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

২. দ্বিতীয় সূত্রের উদাহরণ

  • ফুটবলে জোরে লাথি মারলে এটি বেশি দূর যাবে।
  • ভারী মালবাহী ট্রাক ধীর গতিতে স্টার্ট নেয় কারণ এর ভর বেশি।

৩. তৃতীয় সূত্রের উদাহরণ

  • বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার সময় বন্দুক পেছনে ধাক্কা খায়।
  • হাঁটার সময় পায়ের নিচে মাটিতে চাপ দিলে মাটি বিপরীতভাবে পা ঠেলে দেয়।

নিউটনের তিনটি সূত্র বিবৃতি কর

নিচে তিনটি সূত্রের মূল বিবৃতি দেওয়া হলো—

প্রথম সূত্র:
“বাহ্যিক বলের অভাবে কোনো বস্তু তার গতিবেগ পরিবর্তন করবে না।”

দ্বিতীয় সূত্র:
“বস্তুর ভর ও তার গতি পরিবর্তনের হার বাহ্যিক বলের সমানুপাতিক।”

তৃতীয় সূত্র:
“প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।”

FAQ (সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)

Q1: নিউটনের তিনটি সূত্র কে আবিষ্কার করেছেন?
উত্তর: স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৮৭ সালে তার Principia Mathematica গ্রন্থে এই সূত্রগুলো প্রকাশ করেন।

Q2: নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের গাণিতিক রূপ কী?
উত্তর: নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা হয়— F = ma (বল = ভর × ত্বরণ)।

Q3: নিউটনের তৃতীয় সূত্র বাস্তবে কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: রকেট উৎক্ষেপণ, হাঁটা, নৌকা বাইচ ইত্যাদিতে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায়।

Q5: নিউটনের সূত্র গুলোর প্রভাব কী?
উত্তর: নিউটনের সূত্রগুলো পদার্থবিজ্ঞানে গতির মৌলিক নিয়ম ব্যাখ্যা করে এবং মহাকর্ষ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

Leave a Comment