পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম class 7, 8 এবং 9

Photo of author

By Nur Islam

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম জেনে রাখলে খুব সহজেই আপনি পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে পারবেন। ক্লাস সেভেন, এইট এবং নাইনের বিভিন্ন পরীক্ষায় অনেক সময় “পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম” লিখতে বলা হয়, আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে খুব সহজেই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।  

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম

শুধু পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যই নয় বরং আপনি যদি পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম জেনে রাখেন, তাহলে তা আপনার পারিবারিক জীবনেও কাজে আসবে। এই প্রবন্ধে, আমরা পারিবারিক বাজেট তৈরির বিভিন্ন দিক আলোচনা করব এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর উপর আলোকপাত করব।

পারিবারিক বাজেট কেন প্রয়োজনীয়?

পারিবারিক বাজেট হলো একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যা পরিবারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবং অন্যান্য কারণে দ্রুত জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে দৈনন্দিন খরচ অনেকটাই ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, পারিবারিক বাজেট তৈরি করে খুব সহজেই আপনি খরচ কমাতে পারবেন। 

সঠিক বাজেট পরিকল্পনা পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। তাই পারিবারিক বাজেট কেন প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হলে প্রথমেই জানতে হবে এর গুরুত্ব এবং কীভাবে এটি পরিবারকে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়।

পারিবারিক বাজেট তৈরির প্রথম ধাপ

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম অনুযায়ী বাজেট পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হলো পরিবারের মোট আয় ও খরচের একটি সামগ্রিক হিসেব তৈরি করা। আয়ের বিভিন্ন উৎস যেমন বেতন, ব্যবসার লাভ, বা কোনো বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়, এই সবকিছুই হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। 

খরচের মধ্যে বাড়ি ভাড়া, খাদ্য সামগ্রী ক্রয়, চিকিৎসা খরচ, শিক্ষার ব্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। খরচের হিসেব যথাযথভাবে করতে হবে, সঠিকভাবে খরচের হিসাব করতে না পারলে আপনি কখনোই কার্যকর পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে পারবেন না। তাই যেখানে যত টাকা খরচ হবে তা মোটামুটি একুরেট ভাবে উল্লেখ করতে হবে। 

আয় ও ব্যয়ের তালিকা তৈরি

আয় ও ব্যয়ের তালিকা তৈরি করা বাজেটের একটি অপরিহার্য অংশ। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আয়ের তালিকা করে এবং তার সাথে প্রতিমাসের স্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল খরচগুলির একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। 

স্থায়ী খরচের মধ্যে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে যদি আরও স্থায়ী কোন খরচ থাকে সেটিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরিবর্তনশীল খরচ হলো বাজার খরচ, জামাকাপড়ের জন্য ব্যয়, চিকিৎসার জন্য খরচ ইত্যাদি। আয় ও ব্যয়ের তালিকা তৈরি করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় বেশি খরচ হচ্ছে এবং কীভাবে সেই খরচগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

অপরিহার্য ও অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিতকরণ

বাজেট পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অপরিহার্য ও অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিতকরণ। অপরিহার্য খরচ হলো সেই সকল খরচ যা ছাড়া জীবনযাপন করা সম্ভব নয়, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, ও চিকিৎসা। 

অন্যদিকে, অপ্রয়োজনীয় খরচ হলো সেই খরচ যা ছাড়া চলা সম্ভব, যেমন সিনেমা দেখার জন্য খরচ, ব্যয়বহুল পোশাক কেনা ইত্যাদি। খরচের মধ্যে এই দুই ধরনের পার্থক্য বুঝতে পারলে বাজেট তৈরি করা সহজ হয় এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানো যায়।

কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখা

আপনি যদি পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ করতে চান, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখতে হবে। আপনি যদি কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখেন তাহলে তা আপনার পরিবারকে হঠাৎ কোনো বিপদ বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। সঞ্চয় একটি পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার মূখ্য উপাদান। 

জরুরি পরিস্থিতিতে ঋণ নেওয়া থেকে বাঁচতে সঞ্চয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের জন্য টাকা সঞ্চয় করে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি সুদের ঋণগুলো আগে পরিশোধ করে ঋণের বোঝা কমাতে হবে। ঋণ ও সঞ্চয় পরিচালনার সঠিক কৌশল পরিবারকে আর্থিক সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ

সঠিক বাজেট পরিকল্পনা করার জন্য স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হলো এক বছরের মধ্যে যা অর্জন করতে চান, যেমন একটি নতুন ফোন বা টিভি কেনা। 

দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো যেমন বাড়ি কেনা বা সন্তানের শিক্ষার জন্য সঞ্চয় করা যা সঞ্চয় করতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে। বাজেটে এই ধরনের লক্ষ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে আপনি নিজের সঞ্চয় এবং খরচের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে পারবেন।

বাজেটের সঠিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা

বাজেট তৈরি করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমন গুরুত্ব পূর্ণ হল এর সঠিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা। প্রতিমাসে বা প্রতি সপ্তাহে বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা উচিত, পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট কার্যকর হয়েছে কিনা। খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে আপনি সঠিকভাবে বাজেট পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। যদি কোথাও অতিরিক্ত খরচ হয়, তবে তা সমন্বয় করতে হবে এবং বাজেটের গতি সঠিক রাখতে হবে।

অপ্রত্যাশিত খরচের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা

জীবনের অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকা উচিত। এর মধ্যে হতে পারে চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি, চাকরি হারানো, বা অন্য কোনো ধরনের আর্থিক সঙ্কট। এ জন্য বাজেটে একটি বিকল্প পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে পরিবারের খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। সঞ্চয় তহবিল তৈরি করা, স্বাস্থ্য বিমা করানো ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যা অপ্রত্যাশিত খরচের ক্ষেত্রে কাজে আসবে।

বাজেট কার্যকর করতে পরিবারের ভূমিকা

একটি পরিবারে বাজেট কার্যকর করতে সব সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শুধুমাত্র একজন সদস্যের উপর পুরো দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলে তা কার্যকর হয় না। প্রতিটি সদস্যকে তাদের খরচের জন্য দায়িত্ববান হতে হবে এবং বাজেটের নিয়ম মেনে চলতে হবে। 

বিশেষ করে সন্তানদের বাজেট সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে তারা ছোট থেকেই আর্থিক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং ভবিষ্যতে সঠিকভাবে খরচ পরিচালনা করতে পারে।

বাজেট টিকিয়ে রাখতে কার্যকর কিছু টিপস

বাজেট তৈরি করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এটি দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু কার্যকর টিপস দেওয়া হলো যা আপনাকে আপনার বাজেট সফলভাবে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে:

  • খরচের হিসাব ট্রাক করুন: প্রতিমাসের খরচের উপর নিয়মিত নজর রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো কাটছাঁট করুন।
  • সঞ্চয় অভ্যাস করুন: প্রতিমাসে আপনার আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করে রাখুন।
  • অপ্রয়োজনীয় ঋণ এড়িয়ে চলুন: ঋণ নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন, এটি আপনার বাজেটে প্রভাব ফেলবে কিনা।
  • অফার ও ডিসকাউন্টের সদ্ব্যবহার করুন: বাজার থেকে পণ্য কেনার সময় ডিসকাউন্ট বা অফারে ক্রয় করার চেষ্টা করুন এতে করে কিছু টাকা বেঁচে যাবে। 
  • বিনিয়োগ করুন: সঞ্চয়ের একটি অংশ বিনিয়োগ করুন, যা ভবিষ্যতে আরো বেশি লাভ এনে দিতে পারে। তবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সমাধান থাকতে হবে এবং সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। 

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম class 7

ক্লাস সেভেনের পরীক্ষায় যদি এই ধরনের প্রশ্ন আসে যে, “পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম লিখ” তাহলে আপনি উপরে উল্লেখিত বাজেট তৈরির নিয়ম অনুসরণ করে নিজের মতো করে একটি পারিবারিক বাজেট তৈরি করে লিখে দিতে পারেন। পারিবারিক বাজেট তৈরির যে নিয়ম উপরে উল্লেখ করা তা অনুসরণ করে যে কোন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবেন। 

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম class 8

সেভেন এর মত ক্লাস এইটেও যদি এই ধরনের প্রশ্ন আসে যে, “পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম লিখ” তাহলে অনুরূপভাবে আপনি উপরে উল্লেখিত পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম লিখে দিতে পারবেন। তবে হুবহু মুখস্ত না করে নিজের মতো করে কিছু তথ্য সংযোজন ও বিয়োজন করে দেয়া উচিত। এতে করে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং বহু শিক্ষার্থী একই ধরনের উত্তর প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারবে। 

পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম class 9

ক্লাস সেভেন এবং এইটের চেয়ে “পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম” ক্লাস নাইনের পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই আপনি যদি ক্লাস নাইনের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম আত্মস্থ করে রাখুন তা পরীক্ষার সময় আপনার কাজে লাগতে পারে।

Leave a Comment