মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস করার নিয়ম

Photo of author

By Nur Islam

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সকল মৌলকে আমরা মৌলিক পদার্থ বলি। এগুলোর ভেতর ইলেকট্রনের অবস্থান নির্ধারণ করাকে বলা হয় ইলেকট্রন বিন্যাস। ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়মগুলো জানতে হলে মৌল এবং তাদের পারমাণবিক সংখ্যা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। 

পারমাণবিক সংখ্যা হল মৌলের কেন্দ্রে থাকা প্রোটনের সংখ্যা। প্রতিটি প্রোটন একটির সমান ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে। এই পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে ইলেকট্রনগুলো শেলে অবস্থান নেয়। আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে ইলেকট্রন বিন্যাস করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো।

ইলেকট্রনের অবস্থান

ইলেকট্রনগুলো একটি নির্দিষ্ট শেলে (অরবিটাল) অবস্থান নেয়। প্রত্যেকটি শেলের ধারণক্ষমতা আলাদা হয়। প্রথম শেলটিকে বলা হয় K শেল, এর ধারণক্ষমতা ২টি ইলেকট্রন। দ্বিতীয় শেল L, এর ধারণক্ষমতা ৮টি ইলেকট্রন। তৃতীয় শেল M, এতে সর্বাধিক ১৮টি ইলেকট্রন থাকতে পারে।

ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়ম

ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়ম তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। নিচে তা আলোচনা করা হল:

১. Aufbau নীতি: Aufbau নীতি অনুসারে, ইলেকট্রন সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে অবস্থান নেয়। অর্থাৎ, ইলেকট্রনগুলো প্রথমে সেই শেলে অবস্থান নেয় যেখানে সবচেয়ে কম শক্তি প্রয়োজন। প্রথমে K শেল পূর্ণ হয়, এরপর L শেল, এবং এভাবে পরবর্তী শেলগুলো পূর্ণ হয়।

২. Pauli’s নিষেধাজ্ঞা: Pauli’s নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, এক শেলে দুইটির বেশি ইলেকট্রন থাকতে পারবে না এবং এদের স্পিন বিপরীত হতে হবে। অর্থাৎ, একই শেলের দুই ইলেকট্রনের মধ্যে স্পিনের দিক ভিন্ন হবে।

৩. Hund’s নিয়ম: Hund’s নিয়ম অনুসারে, যদি কোন শেলের মধ্যে একাধিক অরবিটাল থাকে তবে প্রত্যেকটি অরবিটালে প্রথমে একটি করে ইলেকট্রন পূরণ হবে, এরপর দ্বিতীয় ইলেকট্রনগুলো পূরণ হবে। এটি ইলেকট্রনের স্থিতিশীলতা বাড়ায়।

ইলেকট্রন বিন্যাসের উদাহরণ

চলুন কয়েকটি মৌলের উদাহরণ দেখে ইলেকট্রন বিন্যাস কেমন হয় তা জানি:

হাইড্রোজেন (H):

পারমাণবিক সংখ্যা: ১
ইলেকট্রন বিন্যাস: ১s1

হিলিয়াম (He)

পারমাণবিক সংখ্যা: ২
ইলেকট্রন বিন্যাস: ১s2

লিথিয়াম (Li)

পারমাণবিক সংখ্যা: ৩
ইলেকট্রন বিন্যাস: ১s2 ২s1

কার্বন (C)

পারমাণবিক সংখ্যা: ৬
ইলেকট্রন বিন্যাস: ১s2 ২s2 ২p2

অক্সিজেন (O)

পারমাণবিক সংখ্যা: ৮
ইলেকট্রন বিন্যাস: ১s2 ২s2 ২p4

ইলেকট্রন বিন্যাসের গুরুত্ব

ইলেকট্রন বিন্যাস মৌলের রাসায়নিক ধর্ম বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি বলে দেয় যে একটি মৌল কিভাবে অন্যান্য মৌলের সাথে বিক্রিয়া করবে। ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে মৌলটি ধাতব, অধাতব, অথবা অর্ধ-ধাতব হবে কিনা। এছাড়াও, ইলেকট্রন বিন্যাস কিভাবে একটি মৌলের ইলেকট্রন অন্য মৌলের ইলেকট্রনের সাথে বিনিময় করবে বা শেয়ার করবে তা বুঝতে সাহায্য করে।

মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের প্রভাব

একটি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা যায়। যেমন:

১. রাসায়নিক বিক্রিয়া: মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস কিভাবে সেটি অন্য মৌলের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করবে তা নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, মৌলগুলোর বহিঃস্ত শেলের ইলেকট্রনের সংখ্যা তাদের রাসায়নিক ধর্ম নির্ধারণ করে।

২. আয়নিকতা: ইলেকট্রন বিন্যাস মৌলের আয়নিকতা বোঝাতে সাহায্য করে। যদি বহিঃস্ত শেলে কম ইলেকট্রন থাকে, তবে সেটি ইলেকট্রন হারিয়ে পজিটিভ আয়ন তৈরি করতে পারে। আর যদি বহিঃস্ত শেলে বেশি ইলেকট্রন থাকে, তবে সেটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নেগেটিভ আয়ন তৈরি করতে পারে।

৩. শক্তি স্তর: ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে একটি মৌলের বিভিন্ন শক্তি স্তরের ধারণক্ষমতা বোঝা যায়। এটি সেই মৌলের জারক বা বিজারক ধর্ম বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক।

উপসংহার

ইলেকট্রন বিন্যাস একটি মৌলের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি মৌলের রাসায়নিক ধর্ম, আয়নিকতা, এবং বিক্রিয়া ক্ষমতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইলেকট্রন বিন্যাসের নিয়ম অনুসারে একটি মৌল কিভাবে আচরণ করবে তা সহজেই বোঝা যায়। সঠিকভাবে ইলেকট্রন বিন্যাস করতে পারলে মৌলের সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং এর সম্ভাব্য রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment