অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে জানুন

অস্ট্রেলিয়া আজকের বিশ্বে শিক্ষার, কাজের এবং বসবাসের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। উন্নত জীবনযাত্রা, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং চাকরির সুবর্ণ সুযোগের কারণে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মানুষের স্বপ্নের দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া।

আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে, অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে? সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া উচিত। আপনার যদি খরচ সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে খুব সহজেই ভ্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই আর্টিকেলটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে

অস্ট্রেলিয়া যাত্রার মোট খরচ নির্ভর করে যাত্রার উদ্দেশ্য, সময়কাল, এবং যাত্রীর ব্যক্তিগত পরিকল্পনার উপর। সাধারণত অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার খরচে কয়েকটি মূল বিষয়ে রয়েছে যেমন, ভিসা ফি, বিমান টিকিট, মেডিকেল পরীক্ষার খরচ, ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ।

  • বিমান টিকিটের খরচ: ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়া (সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন) যাতায়াতের সরাসরি বিমান নেই। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের মাধ্যমে ট্রানজিট করতে হয়। সাধারণ অর্থে ঢাকা-সিডনি/মেলবোর্ন/ব্রিসবেন রিটার্ন টিকিটের দাম সাধারণত ৮০,০০০ টাকা থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। টিকিটের দাম যাত্রার সময়, এয়ারলাইন্স এবং বুকিং টাইম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
  • ভিসার ফি: অস্ট্রেলিয়ার ভিসার খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরনের উপর। যেমন স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, ট্রাভেল ভিসা ইত্যাদি। সাধারণভাবে অস্থায়ী কাজের ভিসা বা স্কিলড ভিসার জন্য প্রাথমিক ফি কয়েক হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার হতে পারে। বিস্তারিত আলোচনা নিচে করা হয়েছে।
  • মেডিকেল পরীক্ষার খরচ: অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য মেডিকেল পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে সাধারণ মেডিকেল পরীক্ষার খরচ ২০,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয় ফিজিক্যাল, এক্স-রে, রক্তের পরীক্ষা এবং অন্য কিছু প্রয়োজনীয় টেস্ট।
  • অন্যান্য খরচ: অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্রের ফি, টিকা, ভিসার জন্য বায়োমেট্রিক ফি, অনলাইন আবেদন ফি, এবং মাঝে মাঝে ওয়েজ বন্ড জমা দিতে হতে পারে। এছাড়া আঞ্চলিক বা অভিবাসন এজেন্ট ব্যবহার করলে তার সার্ভিস চার্জ আলাদা।
  • খাবার ও থাকার খরচ (যাত্রা পর্যন্ত): অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথম কিছু দিন থাকার ব্যবস্থা ও খাবারের খরচও বিবেচনা করতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে থাকা, ট্রানজিট হোটেল খরচ প্রায় ৫,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • মোট আনুমানিক খরচ: উপরোক্ত সব খরচ মিলিয়ে ধরা যায় যে অস্ট্রেলিয়া যাত্রার জন্য একজন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ১,৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে। তবে এটি অনেকটাই নির্ভর করে যাত্রার সময়কাল, পরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত অবস্থানের উপর।

অস্ট্রেলিয়া কত টাকা বেতন

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি বা কাজের মাধ্যমে আয় কত হতে পারে এটি অনেকেই জানতে আগ্রহী। এখানে আমরা অস্ট্রেলিয়ার কিছু জনপ্রিয় কাজের গড় বেতন নিয়ে আলোচনা করব।

২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০-২৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১৩০০-১৬০০ টাকা) হতে পারে। পুরো সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টা কাজ করলে মাসিক ন্যূনতম বেতন প্রায় ৫,০০০-৬,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৪,০০,০০০ থেকে ৪,৮০,০০০ টাকা)** হতে পারে।

বিভিন্ন পেশার গড় বেতন:

সফটওয়্যার ডেভেলপার৬,০০০ – ৯,০০০৪,৮০,০০০ – ৭,২০,০০০
নার্স৫,০০০ – ৭,০০০৪,০০,০০০ – ৫,৬০,০০০
বিল্ডার/কর্মী৪,০০০ – ৫,৫০০৩,২০,০০০ – ৪,৪০,০০০
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী৩,০০০ – ৪,৫০০২,৪০,০০০ – ৩,৬০,০০০
শিক্ষিকা / শিক্ষক৫,০০০ – ৭,৫০০৪,০০,০০০ – ৬,০০,০০০

অস্ট্রেলিয়ায় বেতন মোটামুটি ভালো হলেও জীবনযাত্রার খরচও অনেক বেশি। খাদ্যদ্রব্য, আবাসন, পরিবহন ইত্যাদিতে খরচ অনেক। তাই কাজের পাশাপাশি খরচ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরি।

অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা ২০২৫ কত টাকা লাগে

অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল হতে পারে। ভিসার খরচ নির্ভর করে ভিসার টাইপ এবং প্রক্রিয়ার ওপর। নিচে ২০২৫ সালের ভিত্তিতে কিছু প্রাথমিক তথ্য দেওয়া হলো।

১. স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা (Subclass 189, 190): এই ধরনের ভিসা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়। এর জন্য আবেদন ফি সাধারণত:

  • প্রধান আবেদনকারী: প্রায় ৪,০৮৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৩,২০,০০০ টাকা)
  • সঙ্গী বা পরিবারের সদস্য: অতিরিক্ত ২০৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১৬০,০০০ টাকা) প্রতি সদস্য

২. ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা (Subclass 417 বা 462): যদি আপনি তরুণ এবং অস্থায়ী কাজ করতে চান, তাহলে ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা গ্রহণ করতে পারেন। এর ফি প্রায় ৪৮০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৩৮,০০০ টাকা)।

৩. স্পন্সরড ওয়ার্কার ভিসা (Subclass 482): এই ভিসা দিয়ে কোনো অস্ট্রেলিয়ান নিয়োগকর্তার মাধ্যমে কাজ করতে পারেন। আবেদন ফি প্রায়:

  • প্রধান আবেদনকারী: ১,৫০০ – ২,৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১২০,০০০ – ২০৫,০০০ টাকা)

৪. ভিসার অন্যান্য খরচ

  • মেডিকেল পরীক্ষা খরচ (২০,০০০ – ৩০,০০০ টাকা)
  • বায়োমেট্রিক তথ্য সরবরাহ ফি (প্রায় ৭,০০০ টাকা)
  • দক্ষতা মূল্যায়ন ফি (বিশেষ পেশার জন্য প্রয়োজনীয়) প্রায় ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে
  • অভিবাসন এজেন্ট সার্ভিস চার্জ (যদি ব্যবহার করেন), যা আলাদা হতে পারে

৫. ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া

ভিসার আবেদন করতে অনলাইন আবেদন করতে হয়। প্রক্রিয়া কঠোর, তাই কাগজপত্র, ইংরেজি দক্ষতা (IELTS/TOEFL) প্রমাণ ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। ব্যয়বহুল হলেও ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি বিনিয়োগ।

উপসংহার

আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেল দিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার খরচ সহ অস্ট্রেলিয়া কোন কাজের বেতন কত সে বিষয়ে সম্পর্কেও এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি সম্পূর্ণ আপনার উপকারে এসেছে। যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন।

Leave a Comment