কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? জেনে নিন কার্যকর উপায় গুলো

Photo of author

By Nur Islam

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এই উপায় গুলো যথাযথভাবে অবলম্বন করলে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আপনি যদি, রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আশা করি উপকৃত হতে পারবেন।

কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়

রাগ এমন একটি প্রাকৃতিক অনুভূতি যা আমরা প্রত্যেকে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অনুভব করি। তবে রাগকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। 

মানুষ যখন কোন কারনে রেগে যায় তখন তার বিবেক ভালোভাবে কাজ করে না, ফলে রাগের সময় মিসবিহেভ করে থাকে, যদিও পরবর্তীতে যখন রাগ ভেঙ্গে যায় তখন সে বুঝতে পারে যে আসলে এরকম করা উচিত হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকর উপায়ে সমূহ নিচে বিস্তারিত হবে উল্লেখ করা হলো। 

রাগের কারণ খুঁজে বের করুন: যখন আপনি রাগান্বিত হয়ে যাবেন, তখন প্রথমে বুঝার চেষ্টা করুন কেন আপনি রেগে গেছেন। আপনার রাগের পেছনে কি কোনো রিজনেবল কারণ আছে? কারণ বোঝা গেলে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে আঘাত করে, তবে সেই পরিস্থিতিতে আপনার রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কারণটি যুক্তিহীন হয়, তাহলে আপনাকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি বিচার করতে হবে। আর রাগের যৌক্তিক কারণ থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ করতে হবে, কেননা আপনি যদি রাগের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তাহলে অঘটন ঘটতে পারে। 

রাগের কারণ যৌক্তিক কিনা তা বিবেচনা করুন: আপনি যখন রেগে যান, তখন নিজের মধ্যে প্রশ্ন তুলুন: “আমার রাগ যৌক্তিক কিনা?” কেননা অধিকাংশ সময় আমরা খুবই সামান্য কারণে রাগান্বিত হয়ে যাই। আপনার রাগ কি আসলেই সঠিক সময়ে, সঠিক কারণে হচ্ছে? যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন এবং যদি দেখেন যে রাগের কারণ তেমন গুরুতর নয়, অবশ্যই আপনাকে অযৌক্তিক সেই রাগ থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত।

শান্ত থাকার চেষ্টা করুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সব থেকে কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল শান্ত থাকার চেষ্টা করা। রাগ যখন আসে, তখন মাথা ঠাণ্ডা রাখা সহজ নয়, তবে এটি অত্যন্ত জরুরি। একবার যদি আপনি শান্ত হতে পারেন, তখন পরিস্থিতিকে ভালোভাবে বিচার করতে পারবেন। গভীর শ্বাস নিন, মনকে স্থির রাখুন এবং যে কারণে আপনি রাগান্বিত হয়েছেন সেই কারণটি সম্পর্কে আরেকটু ভাবুন এবং শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে বিরত থাকুন: রাগের সময় আমরা অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই, যা অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, রাগের সময় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিক্রিয়া জানাবার আগে নিজেকে কিছু সময় দিন। পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝার পরই আপনার পদক্ষেপ নিন।

পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করুন: রাগের সময় আপনি যদি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে না পারেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। এজন্য, চেষ্টা করুন পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আনার। নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনি এই পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম। আপনি যেভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন, সেটাই আপনাকে ভালো বা খারাপ ফলাফল দেবে।

ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করুন: একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবেন, তখন রাগ কমিয়ে ফেলা সহজ হবে। আপনি যখন ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করবেন তখন রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যাবে। সুতরাং রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা উচিত। 

দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে যান: দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হলে অবশ্যই আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, রাগের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে রাগ আরও বেড়ে যায়। তাই যখন আপনি রেগে যান, চেষ্টা করুন বসে যাওয়ার। এই ছোট একটি পদক্ষেপ আপনার শরীরকে শিথিল করবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।

কিভাবে রাগ কমানো যায়

কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এই বিষয় সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে, কিভাবে রাগ কমানো যায়? সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।তাই, কিভাবে রাগ কমানো যায়, তা জানতে চাইলে আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এটি কমানো উচিত। আপনার যদি অতিরিক্ত রাগ থাকে তাহলে তা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই রাগ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিভাবে খুব সহজে আপনি আপনার রাগ কমিয়ে ফেলতে পারেন তা নিচে তুলে ধরা হয়েছে। তো চলুন দেখে নেয়া যাক, কিভাবে রাগ কমানো যায়: 

  • মেডিটেশন: প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করলে তা রাগ কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। এটি মনকে স্থির করে এবং মানসিক চাপ হ্রাস করে। ফলে ধীরে ধীরে আপনারা কমে যেতে থাকে। তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কার্যকর ভাবে যদি আপনি আপনার রাগ কমিয়ে ফেলতে চান, সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করতে পারেন। 
  • শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক চাপকে কমাতে পারেন। এটি রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি ভালো উপায়। শুধু কমানোর জন্যই নয় ব্যায়াম আরো বিভিন্ন ধরনের শারীরিক উপকার করে থাকে। তাই মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই আপনার উচিত হবেন এই নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। 
  • আনন্দ ভ্রমণে যান: আপনি যদি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকেন কিংবা অন্য কোন পেশায় যুক্ত থাকেন যেখানে আপনাকে নির্দিষ্ট টাইমে প্রতিদিন কাজ করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে যাওয়া উচিত। কেননা দীর্ঘদিন কোন ধরনের বিরতি ছাড়াই কাজ করতে থাকলে রাগ বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে কাজ বন্ধ রেখে ভ্রমন করলে তা রাগ কমাতে কমাতে সহায়তা করবে। 
  • ঘুম: ঘুম শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয় তাহলে রাগ বেড়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই প্রতিদিন পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমালে তা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি শক্তিশালী নয় যে কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং সে ব্যক্তিই শক্তিশালী যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে (বুখারি)। সুতরাং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বিশেষ কিছু দোয়া রয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। 

  • আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা। 
  • আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম।

এই দোয়া শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য পড়া হয়। রাগ সাধারণত সন্তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে তাই এই দোয়াগুলো পাঠ করলে আশা করা যায় রাগ নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

রাগ কমানোর ওষুধ

রাগ কমানোর বেশ কিছু প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক ঔষধ রয়েছে। উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো যথাযথভাবে পালন করার পাশাপাশি যদি আপনি নিম্ন বর্ণিত ঔষধ গুলো ব্যবহার করেন তাহলে আশা করা যায় দ্রুত আপনি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন।

  • ল্যাভেন্ডার তেল: ল্যাভেন্ডার তেলের সুগন্ধ মানসিক শান্তি আনে এবং রাগ কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত লেভেন্ডার তেল ব্যবহার করতে পারেন এতে করে মানসিক প্রশান্তি ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাবেন। 
  • ক্যামোমাইল চা: ক্যামোমাইল চা স্নায়ু শান্ত করে এবং রাগ কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ক্যামনাইল চা খেতে পারেন এতে করে প্রকৃত হতে পারবেন। 
  • অশ্বগন্ধা: এটি একটি প্রাকৃতিক হার্ব যা মানসিক চাপ কমিয়ে রাগ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও অশ্বগন্ধার আরও বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপকারিতা রয়েছে তাই নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেতে পারেন, এটি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি শরীরের আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার উপকার সাধন করবে। 

উপসংহার

রাগ একটি স্বাভাবিক অনুভূতি হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসেবে রাগের কারণ খুঁজে বের করা, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা প্রধান পদ্ধতি। এছাড়াও, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়া পড়া এবং প্রাকৃতিক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমেও রাগ কমানো সম্ভব। 

আপনি যদি উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন, তাহলে আশা করি, কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা জানতে পেরেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার অনেক ভালো লেগেছে। যদি এই আর্টিকেলটা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে পারেন এতে করে তারাও জানতে পারবে, কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

Leave a Comment