কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ

কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার মূলধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করার জন্য কওমি মাদ্রাসার বিকল্প নেই। যাই হোক, অনেকেই কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এই আর্টিকেলটিতে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ।

কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ

সম্পূর্ণ ইসলামিক ফান্ডামেন্টাল অনুসরণ করে কওমি মাদ্রাসা গুলো পরিচালিত হয়। ইতিহাসের অবিচ্ছেদ অংশ এই কওমি মাদ্রাসাগুলো যুগ যুগ ধরে ইসলামের সঠিক শিক্ষা জারি রেখেছে। তাই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়, তাকে অবশ্যই কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা ভিন্ন। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসের নাম সকলের জানলেও অনেকেই কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ অনেকেই জানেনা। যাইহোক আপনি যদি, কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ জেনে নিতে চান, তাহলে এই আর্টিকেল আপনাকে স্বাগতম।

প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে, কওমি মাদ্রাসায় দুই ধরনের সিলেবাস রয়েছে। একটি হলো দরসে নেজামী, আর অপরটি হলো মাদানী নেসাব। দুই ধরনের সিলেবাসের ভিন্নতা থাকলেও গ্রন্থগুলো সাধারণত একই হয়ে থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে দরসে নেজামী এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে মাদানী নেসাব অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

প্রথমে আমরা দরসে নেজামী সিলেবাসের আওতাভুক্ত কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহের নাম জেনে নেব। এরপরে মাদানী নেসাব সিলেবাসের কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।

দরসে নেজামী

দরসে নেজামী সিলেবাস বহু কওমি প্রতিষ্ঠানে চালু রয়েছে। আপনি যদি দরসে নেজামী সিলেবাসের কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ জেনে নিতে চান, তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন। নিচে, দরসে নেজামী সিলেবাসের কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ তুলে ধরা হলো।

নূরানী

  • প্রথম শ্রেণি: প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ শুরু হয় এখানে। শিক্ষার্থীরা এখানে মূলত আরবি বর্ণমালা গুলো ভালোভাবে শিখে থাকে, এবং আরবি বর্ণমালা উচ্চারণের যে সকল নিয়ম কানুন রয়েছে সেগুলো আত্মস্থ করে থাকে।
  • দ্বিতীয় শ্রেণি: নুরানী দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়। পাশাপাশি নামাজ সহ অন্যান্য ধর্মীয় ইবাদত গুলোর সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। আরবি বর্ণমালা ও সেগুলো উচ্চারণ নিয়ম কানুন গুলো আবার ভালোভাবে পড়ানো হয়।
  • তৃতীয় শ্রেণি: নূরানী তৃতীয় শ্রেণিতে মূলত কুরআন তেলাওয়াত করা শেখানো হয়। এখানে, কোরআন তেলাওয়াত করার প্রাথমিক হাতে করে দেয়া হয়। এবং যখন একজন শিক্ষার্থী কোরআন পড়া শিখতে সমর্থ হয় তখন তাকে নাজেরা শ্রেণীতে স্থানান্তর করা হয়।

নাজেরা: নাজেরা শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধভাবে পড়তে শেখে এবং পুরো কুরআন নির্ভুলভাবে পাঠ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এবং এটি বেশ কিছুদিন চলতে থাকে, যখন সকল গ্রামারটিকাল রুলস এবং উচ্চারণের বিধিমালা অনুসরণ করে অনর্গল কুরআন পড়া শিখে যায় তখন তাকে হিফজ বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়।

হিফজ: কওমি মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একজন শিক্ষার্থী কোরআন মুখস্ত করা শুরু করে। নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কে পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে তাদের পড়ালেখার সময় ভিন্ন হয়, এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে তাদের পড়াশোনার সময় বৃদ্ধি করা হয়। হিফজ বিভাগেই একজন শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করে থাকে।

কিতাব বিভাগ

  • চতুর্থ ইবতেদাইয়িয়্যা: হিফজ কমপ্লিট করার পরে, একজন শিক্ষার্থী কৃত বিভাগে ভর্তি হয়ে থাকে। তবে, কিতাব বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য হিফজ সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক নয়। হিফজ সম্পন্ন না করেও শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে ভর্তি হতে পারে। এটি কিতাব বিভাগের প্রাথমিক একটি শ্রেণী। এখানে এখানে আরবি, উর্দু এবং ফার্সি ভাষার বর্ণমালা এবং ভোকাবুলারি শেখানো হয়।
  • পঞ্চম (তাইসির): তাইসির শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কে আরবি সাহিত্য এবং গ্রামার সম্পর্কে পাঠ্য দান করা হয়। এবং ছোট ছোট আরবি, উর্দু ও ফারসি গল্প পাঠ দান করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীগণ স্বল্প পরিসরে আরবি উর্দু এবং ফার্সি সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকে।
  • সপ্তম (মিজান): মিজম শ্রেণীতে আরবি গ্রামার পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ইসলামিক গ্রন্থগুলো পাঠ্য দান করা হয়।
  • অষ্টম (নাহবেমীর): ইসলামিক শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো আরবি। আর সঠিকভাবে আরবি শিখতে চাইলে অবশ্যই এর গ্রামার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাহবেমীর স্তরে শিক্ষার্থীরা নাহু ও সরফের উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে।
  • নবম (হেদায়েতুন্নাহ): হেদায়েতুন্নাহ শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের কে ইসলামের বেশ কিছু নিয়ম কানুন, এবং বিভিন্ন ধরনের রুলস রেগুলেশন সম্পর্কে পাঠদান করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে জানতে পারে।
  • দশম (কাফিয়া): এটি একটি উচ্চ স্তরের জামাত, যেখানে শিক্ষার্থীরা আরবি ব্যাকরণ এবং ইসলামি আইনশাস্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলো গভীরভাবে শিখতে শুরু করে। এবং তারা ধীরে ধীরে ইসলামের মূল কিতাব গুলো পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে থাকে।
  • একাদশ (শরহে জামি): কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ হল শরহে জামি। এই শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের কে এই গ্রন্থ থেকে বিশেষ পাঠদান করা হয়।
  • দ্বাদশ (শরহে বেকায়া): শরহে বেকায়া শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের কে শরহে বেকায়া গ্রন্থের উপরে পাঠদান করা হয়ে থাকে।
  • ত্রয়োদশ (জালালাইন): কওমি শিক্ষা সিলেবাস এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব হল জালালাইন। এটি মূলত একটি তাফসীরের কিতাব। জালালাইন শ্রেণীতে প্রার্থীদেরকে তাফসীরের এই কিতাবটি পড়ানো হয়ে থাকে।
  • চতুর্দশ (মিশকাত): মিশকাত শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা প্রখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মিশকাতুল মাসাবিহ অধ্যয়ন করে থাকে। এই কিতাবটি অধ্যয়ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিষয় ভিত্তিক হাদিসের জ্ঞান লাভ করে থাকে।
  • পঞ্চদশ (দাওরায়ে হাদিস): দাওরে হাদিস কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে হাদিসের গভীর জ্ঞানার্জন করা হয়। এটি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সমমানের। দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করার পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিক্ষার্থীদের কে বিশেষ সনদ প্রদান করা হয়।

মাদানী নেসাব

মাদানী নেসাবের শিক্ষা কার্যক্রম দরসে নেজামী থেকে কিছুটা ভিন্ন হলেও মূলত উভয়টি একই শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এখানে কিছু কিছু পাঠ্যপুস্তক ক্লাস অনুযায়ী ভিন্ন হলেও মূল কিতাবগুলো একই। যাইহোক নিচে মাদানী নেসাবের ক্লাসের নাম সমূহ তুলে ধরা হলো।

  • প্রথম বর্ষ
  • দ্বিতীয় বর্ষ
  • তৃতীয় বর্ষ
  • চতুর্থ বর্ষ
  • পঞ্চম বর্ষ
  • ষষ্ঠ বর্ষ
  • সপ্তম বর্ষ (দাওরায়ে হাদিস) {স্নাতকোত্তর}
  • অষ্টম বর্ষ (ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ

কওমি মাদ্রাসার আরবি ক্লাস নামসমূহ

ইতিমধ্যেই উপরে বাংলায় কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে আরবিতে কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ তুলে ধরা হবে। তো চলুন দেখে নেই, কওমি মাদ্রাসার আরবি ক্লাস নামসমূহ।

  • نوراني (নূরানী)
  • نزيرا (নাজেরা)
  • حفظ (হিফজ)
  • الأوردو (উর্দু)
  • تيسير (তাইসির)
  • ميزان (মিজান)
  • نبهمير (নাহবেমীর)
  • هداياتوناهو (হেদায়াতুন্নাহু)
  • كافية (কাফিয়া)
  • شارهجامي (শরহে জামি)
  • شاريه بقايا (শরহে বেকায়া)
  • هداية (হেদায়া)
  • مشكاة (মিশকাত)
  • الدورة (দাওরায়ে হাদিস)

উপসংহার

বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানে প্রচুর কওমি মাদ্রাসা রয়েছে যেগুলো ইসলামী শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। উপমহাদেশের প্রায় সকল ওলামায়ে কেরাম এই মাদ্রাসাগুলোতে অধ্যয়ন করেছেন। আপনি যদি আপনার সন্তানকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা শিক্ষিত করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সন্তানকে কওমি মাদ্রাসায় পড়াতে হবে।

Leave a Comment