Sponsored

ভগ্নাংশের লসাগু সূত্র

0
408

লসাগু বা লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণক (Least Common Multiple) হল দুটি বা তার বেশি সংখ্যার সর্বনিম্ন গুণিতক, যা সংখ্যাগুলির প্রতিটি দ্বারা বিভাজ্য। এই প্রবন্ধে আমরা ভগ্নাংশের লসাগু, এটি কেন প্রয়োজন, কীভাবে নির্ণয় করা যায়, এবং ব্যবহারিক উদাহরণসহ বিশদে আলোচনা করব।

ভগ্নাংশের লসাগু কাকে বলে

ভগ্নাংশের লসাগু (Least Common Multiple বা LCM) একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক পদ্ধতি, যা দুটি বা একাধিক সংখ্যার সর্বনিম্ন গুণিতক নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা ৪ এবং ৬-এর লসাগু নির্ণয় করতে চাই, তবে সেই সংখ্যাটি হবে ১২, কারণ ১২ হল প্রথম সংখ্যা যা ৪ এবং ৬ উভয় দ্বারা বিভাজ্য। ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে, লসাগু নির্ণয়ের মাধ্যমে দুটি ভগ্নাংশকে একই ডিনোমিনেটরে আনা যায়, যা গণনায় সুবিধা দেয়।

লসাগু কেন প্রয়োজন

ভগ্নাংশে লসাগু নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এটি বিভিন্ন গাণিতিক ক্রিয়ায় যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ, এবং ভাগকে সহজ করে তোলে। বিভিন্ন ভগ্নাংশকে সমতুল্য করতে হলে প্রথমে সেগুলির লসাগু বের করে একটি সাধারণ ডিনোমিনেটরে আনতে হয়। বিশেষত যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রে ভগ্নাংশকে একই ভিত্তিতে আনতে লসাগু প্রয়োজনীয়। উদাহরণস্বরূপ, ১/৪ এবং ১/৬ যোগ করতে হলে ৪ এবং ৬-এর লসাগু বের করে সেই সংখ্যাটি উভয় ভগ্নাংশের ডিনোমিনেটর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

লসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি

ভগ্নাংশের লসাগু (LCM) নির্ণয় করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি গনিতের খুবই ব্যাসিক একটি নিয়ম। লসাগু নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

১. মৌলিক গুণনীয়কের পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি সংখ্যাকে মৌলিক গুণনীয়কের আকারে ভেঙ্গে নিয়ে গুণনীয়কগুলির সর্বাধিক মান গুণ করে লসাগু নির্ণয় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের ৮ এবং ১২-এর লসাগু নির্ণয় করতে হয়, তবে প্রথমে সংখ্যাগুলির মৌলিক গুণনীয়ক বের করতে হবে:

  • ৮ = \( 2^3 \)
  • ১২ = \( 2^2 \times 3^1 \)

এক্ষেত্রে উভয় সংখ্যার গুণনীয়কগুলির মধ্যে সর্বাধিক মান ব্যবহার করা হয়: \( 2^3 \) এবং \( 3^1 \)। সুতরাং, লসাগু = \( 2^3 \times 3 = 24 \)।

২. সাধারণ বিভাজন পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে সংখ্যাগুলিকে এমনভাবে বিভাজন করা হয় যাতে প্রতিটি গুণনীয়ক সংখ্যাগুলির মধ্যে অন্তত একটিতে উপস্থিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের ৪ এবং ৫-এর লসাগু নির্ণয় করতে হয়, তাহলে ৪ এবং ৫ উভয় সংখ্যাই প্রাইম, সুতরাং তাদের গুণফল হবে ২০, যা তাদের লসাগু।

৩. সংখ্যা গুণনের পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে সংখ্যা গুণতে গিয়ে উভয় সংখ্যার জন্য একই গুণিতক পাওয়া গেলে সেটিই হবে লসাগু। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের ৩ এবং ৭-এর লসাগু বের করতে হয়, তবে প্রথমে ৩-এর গুণিতকগুলি বের করতে পারি: ৩, ৬, ৯, ১২, ১৫, ১৮, ২১… আবার, ৭-এর জন্যও একইভাবে গুণিতক বের করলে প্রথম মিল হবে ২১, যা হবে লসাগু।

ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয়ের প্রক্রিয়া

ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে লসাগু নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটি খানিকটা ভিন্ন। সাধারণত ভগ্নাংশের জন্য লসাগু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডিনোমিনেটর অংশের লসাগু বের করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:

উদাহরণ ১:

ধরা যাক আমাদের কাছে দুটি ভগ্নাংশ আছে: ১/৪ এবং ১/৬। এখানে ডিনোমিনেটর ৪ এবং ৬-এর লসাগু নির্ণয় করতে হবে।

  • ৪-এর গুণিতক: ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০…
  • ৬-এর গুণিতক: ৬, ১২, ১৮, ২৪…

প্রথম মিলিত গুণিতক ১২, সুতরাং লসাগু = ১২। সুতরাং, এই ভগ্নাংশ দুটি যোগ করতে হলে উভয় ভগ্নাংশকে ১২ দ্বারা ভাগ করতে হবে।

উদাহরণ ২:

আরও উদাহরণ হিসেবে ১/৫ এবং ১/৭-এর লসাগু বের করতে পারি। এ ক্ষেত্রে ডিনোমিনেটর ৫ এবং ৭-এর লসাগু বের করতে হবে।

  • ৫-এর গুণিতক: ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫…
  • ৭-এর গুণিতক: ৭, ১৪, ২১, ২৮, ৩৫…

প্রথম মিলিত গুণিতক ৩৫, তাই লসাগু = ৩৫। এই ফলাফলটি প্রয়োজনীয় সংখ্যা নির্ণয়ে সাহায্য করে।

ভগ্নাংশের যোগ এবং বিয়োগে লসাগুর প্রয়োজনীয়তা

ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রে লসাগু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ভিন্ন ভিন্ন ডিনোমিনেটরযুক্ত ভগ্নাংশগুলিকে যোগ বা বিয়োগ করতে হলে তাদেরকে একটি সাধারণ ডিনোমিনেটরে আনতে হবে।

যোগের উদাহরণ:

ধরা যাক, আমাদের ১/৩ এবং ১/৪ যোগ করতে হবে।

  • ৩ এবং ৪-এর লসাগু = ১২।
  • সুতরাং, ১/৩ কে ৪ দ্বারা গুণ করলে আমরা পাই \( \frac{4}{12} \)।
  • এবং ১/৪ কে ৩ দ্বারা গুণ করলে আমরা পাই \( \frac{3}{12} \)।

এখন উভয় ভগ্নাংশের ডিনোমিনেটর সমান, তাই যোগফল হবে \( \frac{4 + 3}{12} = \frac{7}{12} \)।

বিয়োগের উদাহরণ:

ধরি, ৫/৬ এবং ১/২-এর বিয়োগ করতে হবে।

  • ৬ এবং ২-এর লসাগু = ৬।
  • ৫/৬-এর জন্য ডিনোমিনেটর ৬-ই থাকবে, এবং ১/২ কে ৩ দ্বারা গুণ করলে পাই \( \frac{3}{6} \)।

এখন বিয়োগফল হবে \( \frac{5 - 3}{6} = \frac{2}{6} = \frac{1}{3} \)।

ভগ্নাংশে গুণ ও ভাগের ক্ষেত্রে লসাগুর প্রয়োজনীয়তা

গুণ ও ভাগের ক্ষেত্রে সাধারণত লসাগুর প্রয়োজন হয় না, কারণ এই ক্ষেত্রে ভগ্নাংশগুলোকে সরাসরি গুণ বা ভাগ করা যায়। তবে কখনও কখনও সাধারণ ডিনোমিনেটর প্রয়োজন হয় গাণিতিক সমীকরণ সমাধানে।

উপসংহার

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চই ভগ্নাংশের লসাগু সূত্র সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন কেননা উপরে ভগ্নাংশের লসাগু সূত্র সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। 

Search
Categories
Read More
Education
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ২০২২ প্রবিধান বইয়ের তালিকা | Diploma inMarine Engineering 2022 ProBidhan Book List
সুপ্রিয় শিক্ষা বন্ধুরা, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং...
By nurislam 2024-11-02 03:27:07 0 455
Education
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ২০২২ প্রবিধান বইয়ের তালিকা | diploma inComputer 2022 Providhan Book List
সুপ্রিয় শিক্ষা বন্ধুরা, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে...
By nurislam 2024-11-02 01:52:20 0 567
Education
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ২০২২ প্রবিধান বইয়ের তালিকা | diploma inCivil 2022 Providhan Book List
সুপ্রিয় শিক্ষা বন্ধুরা, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আপনার...
By nurislam 2024-11-02 02:14:52 0 536
Education
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা | GST Admission
আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা,বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি এটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট আর্টিকেলটিতে...
By nurislam 2024-11-02 04:48:42 0 678
Education
সামান্তরিকের আয়তন নির্ণয়ের সূত্র
সামান্তরিকের আয়তন নির্ণয়ের সূত্র হলো: V = A × h. নিচে উদাহরণসহ ঘন সামান্তরিকের আয়তন...
By nurislam 2024-11-02 04:30:28 0 598