নেপাল টুরিস্ট ভিসা ২০২৫ | Nepal tourist visa

নেপাল টুরিস্ট ভিসা বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি নিম্ন বর্ণিত আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে নেপাল টুরিস্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

উপস্থাপনা

বাংলাদেশ থেকে নেপাল ঘুরতে যাওয়া অনেক সহজ এবং জনপ্রিয়, কারণ এই দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। কাঠমান্ডু উপত্যকা থেকে শুরু করে পোখারা কিংবা এভারেস্ট বেস ক্যাম্প পর্যন্ত, নেপাল পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি দেশ। তবে ভ্রমণের আগে অবশ্যই নেপাল টুরিস্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া উচিত।

নেপাল টুরিস্ট ভিসা খরচ

নেপাল টুরিস্ট ভিসার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং সাশ্রয়ী। আপনি চাইলে বিমানবন্দরে অবতরণের পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেতে পারেন। বর্তমানে নেপাল সরকার তিন ধরণের টুরিস্ট ভিসা অফার করে থাকে। ১৫ দিনের টুরিস্ট ভিসা ফি ৩০ মার্কিন ডলার, ৩০ দিনের জন্য ৫০ মার্কিন ডলার এবং ৯০ দিনের টুরিস্ট ভিসার জন্য গুনতে হয় ১২৫ মার্কিন ডলার। 

তবে বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক সময় এই ভিসা ফি আরও কিছুটা কম থাকে, বিশেষ করে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে। এই ফি আপনি নগদ ডলার অথবা আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন।

নেপাল টুরিস্ট স্পট

নেপাল এমন একটি দেশ, যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অ্যাডভেঞ্চার মিলেমিশে তৈরি হয়েছে এক অতুলনীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। প্রতিটি টুরিস্ট স্পট আলাদা স্বাদ ও অনুভূতি দেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক নেপালের শীর্ষ ৫টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

কাঠমান্ডু উপত্যকা (Kathmandu Valley)

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও আশপাশের এলাকাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত এই উপত্যকাটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আধার। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও স্বীকৃত।

  • পশুপতিনাথ মন্দির: বাগমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরে শিবভক্তরা প্রতিদিন পূজা দিতে আসে। শিবরাত্রি উৎসবে এখানে লাখ লাখ হিন্দু তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটে।
  • সোয়ম্ভুনাথ (বানর মন্দির): পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপটি থেকে কাঠমান্ডু শহরের দারুণ দৃশ্য দেখা যায়। বানরদের জন্যও বিখ্যাত।
  • পাটান দরবার স্কয়ার: নিউআর সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশিল্পের প্রতীক। এখানে পুরাতন মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও জাদুঘর দেখা যায়।
  • ভক্তপুর: এটি একটি পুরো শহর যেখানে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য এখনো জীবিত। পটারি স্কয়ার, নাইতাপোলা মন্দির, এবং ঐতিহাসিক কাঠের কারুকাজ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

পোখারা (Pokhara)

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরটি প্রকৃতি ও প্রশান্তির এক অপূর্ব মিলন। কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা পোখারা, হিমালয় দর্শন ও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য বিখ্যাত।

  • ফেওয়া লেক: শহরের প্রাণকেন্দ্র এই লেকে আপনি নৌকা চালাতে পারবেন, সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন এবং লেকসাইডে আরামদায়ক কফি শপ ও হোটেল পাবেন।
  • সারাংকোট: এখান থেকে মাচাপুচারে, ধৌলাগিরি ও অন্নপূর্ণা রেঞ্জ দেখা যায়। প্যারাগ্লাইডিং-এর জন্যও এটি আদর্শ স্থান।
  • শান্তি স্তূপ: পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই স্তূপ থেকে পোখারা শহরের দারুণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এটি বিশ্ব শান্তির প্রতীক।
  • দেবি’স ফলস ও গুপ্তেশ্বর গুহা: একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত ও তার নিচে বিস্ময়কর গুহা রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

অ্যাডভেঞ্চার ও হাইকিং

নেপাল হলো বিশ্বজুড়ে ট্রেকিং ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বপ্নের গন্তব্য। পাহাড়, উপত্যকা এবং বনভূমির মাঝে আপনি পেয়ে যাবেন শত শত ট্রেকিং রুট ও অ্যাকটিভিটি।

  • এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেক (EBC Trek): এটি ১২-১৫ দিনের একটি ট্রেক যা আপনাকে নেপালের শেরপা গ্রাম, গ্লেসিয়ার এবং হিমালয় সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিয়ে যাবে।
  • অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক: এই ট্রেকিং রুটে থোরং লা পাস, মানাং, মুক্তিনাথ, এবং পাহাড়ি সংস্কৃতির অসাধারণ অভিজ্ঞতা মেলে।
  • বাঞ্জি জাম্পিং: ভোটে কোশি নদীর উপরে ১৬০ মিটার উঁচু সাসপেনশন ব্রিজ থেকে বাঞ্জি করার সুযোগ রয়েছে।
  • প্যারাগ্লাইডিং ও রাফটিং: পোখারা ও ত্রিশূলী নদীতে প্যারাগ্লাইডিং এবং রাফটিং অভিজ্ঞতা দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ।

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক (Chitwan National Park)

নেপালের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই পার্কটি বন্যপ্রাণী, জঙ্গল সাফারি এবং সংস্কৃতি উপভোগের জন্য বিখ্যাত। এটি ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

  • জঙ্গল সাফারি: হাতি বা জিপে চড়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে আপনি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এক শৃঙ্গযুক্ত গন্ডার, হরিণ, বানর এবং নানা ধরনের পাখি দেখতে পাবেন।
  • থারু নৃত্য ও সংস্কৃতি: স্থানীয় থারু জনগোষ্ঠীর লোকজ সংস্কৃতি ও নৃত্য খুবই জনপ্রিয়। তারা পরিবেশনার মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য তুলে ধরে।
  • ক্যানোয়িং ও বার্ড ওয়াচিং: নদী পথে নৌকায় ভ্রমণের মাধ্যমে কুমির দেখা যায় এবং বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির দর্শন মেলে।

লুম্বিনী (Lumbini)

লুম্বিনী হলো গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থভূমি। এটি নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং বিশ্বজুড়ে ভক্তদের আকর্ষণ করে।

  • মায়াদেবী মন্দির: এখানে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানের নিদর্শন হিসেবে একটি পাথরের স্তম্ভ ও প্রাচীন স্থাপত্য দেখা যায়।
  • আশেপাশের বৌদ্ধ মঠসমূহ: জাপান, চীন, ভুটান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিভিন্ন দেশের নির্মিত মঠগুলো আলাদা আর্কিটেকচারে নির্মিত যা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
  • লুম্বিনী মিউজিয়াম: এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকর্ম, পাণ্ডুলিপি ও বুদ্ধের জীবনের উপর ভিত্তি করে চিত্র প্রদর্শিত হয়।

নেপাল টুরিস্ট ভিসা কত টাকা

নেপাল টুরিস্ট ভিসার সঠিক খরচ নির্ভর করে আপনি কত দিনের জন্য ভিসা নিতে চাচ্ছেন তার ওপর। সাধারণত অন-অ্যারাইভাল ভিত্তিতে ভিসা নিতে গেলে তিনটি মূল অপশন পাওয়া যায়। ১৫ দিনের ভিসা নিতে খরচ পড়ে ৩০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৩৫০০ টাকা। 

৩০ দিনের ভিসার জন্য প্রায় ৫০ ডলার, যা প্রায় ৫৮০০ টাকা। আর ৯০ দিনের ভিসার খরচ ১২৫ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪,৫০০ টাকার মতো। তবে ভিসা ফি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে এবং এর সঙ্গে ব্যাংক চার্জ ও অনলাইন প্রসেসিং ফি যুক্ত হতে পারে। 

যদি আপনি নেপালে স্থলপথে প্রবেশ করেন, সেক্ষেত্রে ভারত থেকে নেপালে ঢোকার সময় ভিসা নেয়ার প্রক্রিয়াও প্রযোজ্য হবে এবং একই ভিসা ফি প্রযোজ্য হবে।

নেপাল টুরিস্ট ভিসা কি কি লাগে

নেপাল টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও শর্তাবলি অত্যন্ত সহজ এবং কম ঝামেলার। ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার প্রথমে দরকার বৈধ পাসপোর্ট যার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনাকে একটি পূরণকৃত টুরিস্ট ভিসা ফর্ম জমা দিতে হবে, যা অনলাইনে পূরণ করে সঙ্গে প্রিন্ট করে নিতে হবে। 

এরপর একটি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে, যেটি অন-অ্যারাইভাল ভিসার সময়ও লাগবে। তৃতীয়ত, প্রমাণপত্র হিসেবে থাকা-খাওয়ার ঠিকানা (হোটেল বুকিং), যাত্রার ফিরতি টিকিট বা ট্রাভেল প্ল্যান এবং পর্যাপ্ত অর্থ প্রমাণ করতে হবে যেন বোঝা যায় আপনি ভ্রমণের জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত।

আপনি যদি অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে চান, তাহলে কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে এই ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে রাখলেই যথেষ্ট। অনলাইন আবেদন করলে আপনি আরও আগে থেকেই সব কিছু প্রস্তুত করতে পারবেন।

উপসংহার

শেষ কথায় বলা যায়, নেপাল টুরিস্ট ভিসা পাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য খুবই সহজ এবং ব্যয়বহুল নয়। একটি বৈধ পাসপোর্ট, কয়েকটি সাধারণ কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি দিয়ে আপনি সহজেই নেপালে প্রবেশ করে হিমালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তাই এবার আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে নেপাল, যেখানে প্রকৃতি আর সংস্কৃতি একসাথে আপনাকে নতুন এক অভিজ্ঞতা দেবে।

Leave a Comment