কেপলারের ২য় সূত্র

কেপলারের ২য় সূত্র নিচে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়লে কেপলারের ২য় সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। 

কেপলারের ২য় সূত্র

জ্যোতির্বিজ্ঞানে কেপলারের ২য় সূত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম যা গ্রহগুলোর কক্ষপথে ঘোরার সময় তাদের গতি কেমন হবে তা নির্ধারণ করে। জোহানেস কেপলার তার মহাকর্ষীয় সূত্রসমূহের মধ্যে এই দ্বিতীয় সূত্রটি তৈরি করেছিলেন ১৬০৯ সালে। এই সূত্রটি ব্যাখ্যা করে, কীভাবে একটি গ্রহ যখন সূর্যের নিকটে থাকে, তখন তার গতি দ্রুত হয় এবং যখন দূরে থাকে তখন গতি ধীর হয়।

কেপলারের ২য় সূত্র কী বলে

কেপলারের দ্বিতীয় সূত্রটি বলে: “কোনো গ্রহ সূর্যকে ঘিরে তার কক্ষপথে আবর্তনের সময় এমনভাবে চলে যে, সমান সময়ে সূর্য ও গ্রহের মাঝের যে রেখা তৈরি হয় তা সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।”

অর্থাৎ, গ্রহ যখন সূর্যের কাছাকাছি থাকে, তখন সেটা দ্রুতগতিতে চলে এবং সূর্য থেকে দূরে থাকলে ধীর গতিতে চলে। তবে দুই ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমান হয় যদি সময় সমান থাকে।

উদাহরণ: ধরুন একটি গ্রহ জানুয়ারি মাসে সূর্যের খুব কাছে থাকে এবং জুলাই মাসে সূর্য থেকে দূরে থাকে। জানুয়ারিতে সে খুব দ্রুত চলবে এবং জুলাইতে ধীর গতিতে চলবে। কিন্তু জানুয়ারি ও জুলাইতে সূর্য ও গ্রহের মাঝখানের রেখাটি সমান সময়ের মধ্যে সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করবে।

এই সূত্র কীভাবে কাজ করে

এই সূত্রটি মূলত গ্রহের গতি এবং তার কক্ষপথে অবস্থানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এটি বলে, গ্রহ এবং সূর্যের মধ্যে একটি কাল্পনিক রেখা নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে। যেহেতু কক্ষপথ উপবৃত্তাকার, তাই সূর্যের সাথে দূরত্ব সবসময় এক থাকে না।

সূত্রটি কার্যকর হয় কারণ অভিকর্ষ বল এবং গতিশক্তি সবসময় একভাবে কাজ করে না; এটি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, এবং এর ফলেই ক্ষেত্রফল সমান থাকে।

উদাহরণ: যদি কোনো গ্রহ ৩ দিন সময়ে সূর্য থেকে খুব কাছাকাছি এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যায় এবং সূর্য ও গ্রহের মাঝখানের রেখাটি একটি নির্দিষ্ট এলাকা অতিক্রম করে, তাহলে পরবর্তী ৩ দিনে গ্রহটি সূর্য থেকে দূরে গিয়ে একই ক্ষেত্রফল অতিক্রম করবে, যদিও তার গতি কম থাকবে।

সূত্রটি কেন গুরুত্বপূর্ণ

কেপলারের দ্বিতীয় সূত্রটি আমাদের সৌরজগতের গতিশীলতা বুঝতে সাহায্য করে। এটি শুধু গ্রহ নয়, উপগ্রহ, ধূমকেতু এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর গতিবিধি বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও, এটি মহাকর্ষের ব্যাখ্যাও সুসংগতভাবে দেয়, কারণ গ্রহের গতি ও অবস্থান নির্ধারণে এই সূত্র অত্যন্ত কার্যকর। এটি নিউটনের গাণিতিক সূত্রগুলির আগেই ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু নিউটন এই সূত্রের ব্যাকগ্রাউন্ডে গাণিতিক ভিত্তি প্রদান করেন।

উদাহরণ: মহাকাশ গবেষণায়, যেমন মঙ্গলগ্রহে স্যাটেলাইট পাঠানোর সময়, এর কক্ষপথ নির্ধারণে এই সূত্রটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কক্ষপথে গতি ও ক্ষেত্রফল সম্পর্ক

এই সূত্র অনুসারে, গ্রহ যত সূর্যের নিকটে থাকবে, তার গতি তত বেশি হবে এবং যত দূরে থাকবে, তত ধীরে চলবে। কিন্তু সূর্য ও গ্রহের মাঝখানে টানা রেখার সমান সময়ের ক্ষেত্রফল সর্বদা সমান থাকবে।

এটি ক্ষেত্রফল এবং গতি – এই দুটি ভিন্ন বিষয়কে একটি সূত্রে একত্রিত করেছে যা মহাকাশগত গতি বিশ্লেষণের জন্য খুবই কার্যকর।

উদাহরণ: হ্যালির ধূমকেতু যখন সূর্যের কাছে আসে তখন খুব দ্রুত চলে, কিন্তু যখন দূরে থাকে তখন ধীর হয়ে যায়। তবে দুই অবস্থার ক্ষেত্রফল সমান সময়ে সমান থাকে।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

Q1: কেপলারের ২য় সূত্র কে আবিষ্কার করেন?
Ans: জোহানেস কেপলার ১৬০৯ সালে এই সূত্রটি আবিষ্কার করেন।

Q2: কেপলারের ২য় সূত্র কোন গ্রহ বা বস্তুর জন্য প্রযোজ্য?
Ans: এটি সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু এবং মহাকাশে আবর্তনকারী বস্তুর জন্য প্রযোজ্য।

Q3: কেপলারের ২য় সূত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ কী?
Ans: এটি মহাকাশযানের কক্ষপথ নির্ধারণ, গ্রহের গতি বিশ্লেষণ ও মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।

Q4: সূর্য থেকে দূরে গেলে গ্রহের গতি কেন কমে যায়?
Ans: কারণ তখন অভিকর্ষ বল কম থাকে, তাই গতি কম হয়।

Q5: কেপলারের ২য় সূত্র কি নিউটনের সূত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত?
Ans: হ্যাঁ, নিউটন কেপলারের সূত্রগুলিকে গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং মহাকর্ষ সূত্রের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করেছেন।

Leave a Comment