চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র

- প্রকাশিত : ০৩:১১:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / 22
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র উদাহরণ ও ব্যাখ্যা সহ নিচে তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নবর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সহিত অধ্যায়ন করলে, চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র
অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা। যখন দুটি পণ্যের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়, তখন চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা (Cross Price Elasticity of Demand) একটি গুরত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি আমাদের জানায়, এক পণ্যের দামে পরিবর্তনের ফলে অপর পণ্যের চাহিদায় কতটা পরিবর্তন ঘটে। নিচে চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র ও এর উপাদানসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা বোঝায় এক পণ্যের দামে পরিবর্তনের ফলে আরেক পণ্যের চাহিদায় যে অনুপাতিক পরিবর্তন ঘটে। এই মাপকাঠি মূলত বিকল্প (Substitute) ও পরিপূরক (Complementary) পণ্যের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে।
উদাহরণ: যদি কোকা কোলার দাম বেড়ে যায় এবং পেপসির বিক্রি বৃদ্ধি পায়, তাহলে বলা যায় কোকা কোলা ও পেপসি বিকল্প পণ্য এবং এদের মধ্যে চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা ধনাত্মক।
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার সূত্র হলোঃ
Ec = (% Δ Qd of Product A) / (% Δ Price of Product B)
অথবা,
Ec = (ΔQa / Qa) ÷ (ΔPb / Pb)
এখানে,
Ec = চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা
ΔQa = পণ্য A-এর চাহিদায় পরিবর্তন
Qa = পণ্য A-এর পূর্ববর্তী চাহিদা
ΔPb = পণ্য B-এর মূল্যে পরিবর্তন
Pb = পণ্য B-এর পূর্ববর্তী মূল্য
উদাহরণ: যদি কফির দাম 10% বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে চায়ের চাহিদা 5% বৃদ্ধি পায়, তাহলে:
Ec = 5% / 10% = +0.5
এখানে ধনাত্মক মান নির্দেশ করে যে কফি ও চা বিকল্প পণ্য।
Ec > 0 (বিকল্প পণ্য)
যখন চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান ধনাত্মক হয়, তখন বোঝা যায় পণ্যদ্বয় বিকল্প পণ্য। অর্থাৎ, একটি পণ্যের দাম বাড়লে অন্যটির চাহিদা বাড়ে।
উদাহরণ: বাসের ভাড়া বাড়লে অনেকেই ট্রেনে যাতায়াত শুরু করেন। এখানে বাস ও ট্রেন বিকল্প পণ্য।
Ec < 0 (পরিপূরক পণ্য)
যদি চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান ঋণাত্মক হয়, তাহলে পণ্যদ্বয় পরিপূরক। একটির দাম বাড়লে অন্যটির চাহিদা কমে যায়।
উদাহরণ: গাড়ির দাম বেড়ে গেলে পেট্রোলের চাহিদা কমে যেতে পারে। অর্থাৎ গাড়ি ও পেট্রোল পরিপূরক পণ্য।
Ec = 0 (কোন সম্পর্ক নেই)
যদি চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা শূন্য হয়, তাহলে বোঝা যায় দুটি পণ্যের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। একটির দামের পরিবর্তনে অপরটির চাহিদা কোনোভাবে প্রভাবিত হয় না।
উদাহরণ: আপেলের দাম বেড়েছে বলে মোবাইল ফোনের বিক্রয় পরিবর্তন হয় না। আপেল ও মোবাইল একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার ব্যবহার
এই সূচকটি বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন:
- বাজারে প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ
- মূল্য নির্ধারণ কৌশল পরিকল্পনা
- নতুন পণ্যের প্রভাব পরিমাপ
উদাহরণ: একটি কোম্পানি যদি দেখে যে তাদের পণ্যের পরিবর্তে গ্রাহকরা সহজেই বিকল্প গ্রহণ করছে, তাহলে তারা দাম কমানোর কৌশল নিতে পারে।
FAQ
Q1: চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা কী বোঝায়?
চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা বোঝায় এক পণ্যের দামে পরিবর্তনের ফলে অন্য পণ্যের চাহিদায় যে পরিবর্তন ঘটে তার অনুপাত।
Q2: Ec ধনাত্মক হলে কী বোঝায়?
Ec ধনাত্মক হলে বোঝায় দুটি পণ্য বিকল্প (Substitute), অর্থাৎ একটির দাম বাড়লে অন্যটির চাহিদা বাড়ে।
Q3: Ec ঋণাত্মক হলে কী বোঝায়?
Ec ঋণাত্মক হলে বোঝায় দুটি পণ্য পরিপূরক (Complementary), অর্থাৎ একটির দাম বাড়লে অন্যটির চাহিদা কমে।
Q4: চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা কাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
এই সূচকটি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Q5: কীভাবে Ec গণনা করা হয়?
Ec = (% Δ চাহিদা পণ্য A) ÷ (% Δ দাম পণ্য B) সূত্রে গণনা করা হয়।