বয়েলের সূত্র | boyle’s law formula

- প্রকাশিত : ১২:০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
- / 51
বয়েলের সূত্র বা Boyle’s Law Formula হলো গ্যাসের চাপ ও আয়তনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র। এই আর্টিকেলে বয়েলের সূত্র কী, গাণিতিক রূপ, ব্যাখ্যা, লেখচিত্র এবং চার্লসের সূত্রের সাথে তুলনা সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বয়েলের সূত্র কি
বয়েলের সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের একটি প্রাচীন ও মৌলিক গ্যাস সূত্র যা গ্যাসের চাপ ও আয়তনের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। এটি রবার্ট বয়েল নামক একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী ১৬৬২ সালে আবিষ্কার করেন। তিনি গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসকে একটি বদ্ধ পাত্রে রেখে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়, তাহলে গ্যাসটির উপর প্রয়োগকৃত চাপ এবং তার আয়তনের গুণফল সর্বদা একটি নির্দিষ্ট ধ্রুবক থাকে।
অর্থাৎ, গ্যাসের চাপ বাড়ালে আয়তন কমে যায় এবং চাপ কমালে আয়তন বাড়ে – এই সম্পর্কটাই বয়েলের সূত্রের মূল কথা।
বয়েলের সূত্র কাকে বলে
যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অবস্থান করে, তখন গ্যাসটির উপর চাপ (Pressure) এবং তার দখলকৃত আয়তন (Volume)-এর গুণফল একটি ধ্রুবক মান হয়। একে বয়েলের সূত্র বলা হয়।
রবার্ট বয়েল প্রথম এই সূত্র আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন যে গ্যাসের এই আচরণ সবসময় নির্দিষ্টভাবে চলে। পরবর্তীতে, এই সূত্র গ্যাসের ধর্ম বোঝাতে সবচেয়ে প্রাথমিক ও মৌলিক সূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
বয়েলের সূত্র গাণিতিক রূপ
বয়েলের সূত্রের গাণিতিক প্রকাশ হলো:
P × V = k
যেখানে,
P = গ্যাসের চাপ (Pressure)
V = গ্যাসের আয়তন (Volume)
k = একটি ধ্রুবক (Constant), যেটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অপরিবর্তিত থাকে।
একটি গ্যাসের দুটি ভিন্ন অবস্থার মধ্যে সম্পর্ক দেখাতে হলে:
P₁ × V₁ = P₂ × V₂
এই সূত্র ব্যবহার করে গ্যাসের চাপ বা আয়তনের পরিবর্তন হিসেব করা যায় যদি অন্য মানগুলো জানা থাকে।
বয়েলের সূত্র কোনটি
বয়েলের সূত্র হচ্ছে:
P × V = k
অথবা,
P₁ × V₁ = P₂ × V₂
এটি গ্যাসের উপর প্রয়োগযোগ্য এমন একটি সূত্র যা চাপ ও আয়তনের মধ্যকার বিপরীত সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করে। অর্থাৎ, চাপ বাড়লে আয়তন কমে এবং চাপ কমলে আয়তন বাড়ে।
বয়েলের সূত্র বিবৃত কর
বিবৃতি:
“যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের উপর তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়, তবে গ্যাসটির চাপ ও আয়তনের গুণফল একটি ধ্রুবক হয়।”
এই বিবৃতি থেকেই বোঝা যায়, গ্যাসের চাপ ও আয়তনের মধ্যে একটি বিপরীত সম্পর্ক (inverse relationship) বিরাজ করে।
বয়েলের সূত্র কী
বয়েলের সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক সূত্র যা গ্যাসের আচরণ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রধানত তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রেখে গ্যাসের চাপ এবং আয়তনের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
এই সূত্রের সাহায্যে গ্যাস প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, আবহাওয়া, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়।
বয়েলের সূত্র ব্যাখ্যা কর
চলুন একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বয়েলের সূত্র ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরা যাক, একটি সিলিন্ডারে গ্যাস রয়েছে এবং এর মুখে একটি চলন্ত পিস্টন লাগানো আছে। যদি পিস্টনের উপর চাপ প্রয়োগ করে সিলিন্ডারের আয়তন কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভিতরের গ্যাস অণুগুলোর গতি সীমিত হয়ে পড়ে এবং তারা একে অপরের সাথে এবং সিলিন্ডারের প্রাচীরের সাথে বেশি সংঘর্ষ করতে থাকে। এর ফলে গ্যাসের চাপ বেড়ে যায়।
তবে, গ্যাসের তাপমাত্রা যদি অপরিবর্তিত রাখা হয়, তাহলে গ্যাসের চাপ ও আয়তনের গুণফল একই থাকবে। এই সম্পর্ককেই বয়েলের সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
এই বাস্তব উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, আয়তন যত কমে, চাপ তত বাড়ে – এবং এর বিপরীত।
বয়েলের সূত্র লেখচিত্র
বয়েলের সূত্রকে লেখচিত্র বা গ্রাফ আকারে প্রকাশ করলে এটি একটি হাইপারবোলিক গ্রাফ হয়। গ্রাফে:
X-অক্ষ (Horizontal Axis): গ্যাসের আয়তন (V)
Y-অক্ষ (Vertical Axis): গ্যাসের চাপ (P)
যেহেতু চাপ ও আয়তনের মধ্যে একটি বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে, তাই লেখচিত্র একটি বাঁকা রেখা আকারে উপস্থাপিত হয়, যা V বাড়ার সাথে সাথে P কমে এবং V কমার সাথে সাথে P বাড়ে।
এই লেখচিত্রটি দেখতে নিচের মতো:

বয়েলের সূত্র (Boyle’s Law):
- তাপমাত্রা অপরিবর্তিত
- চাপ ও আয়তনের সম্পর্ক
- সূত্র: P × V = Constant
চার্লসের সূত্র (Charles’s Law):
- চাপ অপরিবর্তিত
- আয়তন ও তাপমাত্রার সম্পর্ক
- সূত্র: V ∝ T বা V/T = Constant
দুইটি সূত্র মিলে গ্যাসের পূর্ণাঙ্গ আচরণ বিশ্লেষণে সহায়তা করে।
প্রশ্নোত্তর সমূহ
Q1: বয়েলের সূত্র কী বুঝায়?
Ans: বয়েলের সূত্র বুঝায় যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গ্যাসের চাপ ও আয়তনের গুণফল একটি নির্দিষ্ট ধ্রুবক হয়, অর্থাৎ তারা একে অপরের বিপরীতভাবে পরিবর্তিত হয়।
Q2: বয়েলের সূত্রের আবিষ্কারক কে?
Ans: ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল ১৬৬২ সালে এই সূত্র আবিষ্কার করেন।
Q3: বয়েলের সূত্র কীভাবে প্রয়োগ করা হয়?
Ans: যদি গ্যাসের আয়তন বা চাপের মান পরিবর্তন হয় এবং অন্য মানটি জানতে হয়, তাহলে বয়েলের সূত্র ব্যবহার করে সহজেই অন্যটি নির্ণয় করা যায়।
Q5: বয়েলের সূত্রের ব্যবহার কোথায় দেখা যায়?
Ans: স্প্রেয়ার, সাইকেল পাম্প, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ইঞ্জিন, ফিজিক্স ল্যাব ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই সূত্রের ব্যবহার দেখা যায়।